স্বদেশ ডেস্ক:
হোটেল ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন (৪৫)। গ্রামের বাড়িতে ঈদ উদযাপন শেষে সিএনজি অটোরিকশাযোগে কুমিল্লায় ফিরছিলেন। সঙ্গে ছিলেন তার মা, স্ত্রী, চার সন্তান ও এক হোটেল বয়। কিন্তু চোখের পলকে তিসা পরিবহনের যাত্রীবাহী দ্রুতগতির একটি বাসের চাপায় শেষ পুরো পরিবারটি। বিপরীতমুখী বাসের চাপায় তাদের বহন করা অটোরিকশাটি দুমড়েমুচড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই পরিবারের তিনজন মারা যায়। হাসপাতালে নেওয়ার পথে মৃত্যু হয় জসিমের তিন সন্তানের। ঘটনাস্থলে নিহত হন সিএনজিচালক এবং হোটেল বয়ও। মুমূর্ষু অবস্থায় বেঁচে রয়েছে কেবল আট বছরের শিশু রিফাত। তাকে উন্নত চিকিৎসা দিতে ঢাকায় নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তার অবস্থা সংকটাপন্ন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
গতকাল রবিবার দুপুর ১২টায় কুমিল্লা-নোয়াখালী সড়কের লালমাই উপজেলার বাগমারা জামতলী এলাকায় ভয়াবহ এ দুর্ঘটনাটি ঘটে। জানা গেছে, কুমিল্লা নগরীর গোয়ালপট্টি এলাকায় বন্ধন নামে একটি খাবার হোটেলের ব্যবসা করতেন নাঙ্গলকোটের ঘোড়া ময়দান গ্রামের জসিম উদ্দিন। ঈদের ছুটি শেষে মা, স্ত্রী ও চার সন্তান এবং এক হোটেল বয়কে নিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে কর্মস্থলে ফিরছিলেন। তাদের বহনকারী সিএনজি অটোরিকশাটি কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক সড়কের জামতলীতে পৌঁছলে বিপরীতমুখী তিসা পরিবহনের বেপরোয়া গতির বাস চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই পাঁচজন এবং হাসপাতালে নেওয়ার পথে আরও তিনজন মারা যান।
নিহতরা হলেন- হোটেল ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন (৪৫), তার স্ত্রী সেলিনা বেগম (৪০), মা সকিনা বেগম (৭০), ছেলে শিপন (১৭) ও হৃদয় (১৫), মেয়ে নিপু আক্তার (১৩), সিএনজিচালক জামাল হোসেন (৩৫), হোটেল বয় সাইমুন হোসেন (১৫)। এর মধ্যে জামাল একই উপজেলার করপতি বেপারি বাড়ির মৃত জিতু মিয়ার ছেলে এবং সাইমুন একই গ্রামের মাতুম্মির ছেলে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন লালমাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বদরুল আলম তালুদার।
চালক জামালের ভাই কামাল হোসেন বলেন, ‘নাঙ্গলকোট উপজেলার ঘোড়া ময়দান ও করপাতি পাশাপাশি গ্রাম। হোটেল ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন তার মা, স্ত্রী ও ছেলেমেয়ে নিয়ে কুমিল্লার গোয়ালপট্টিতে থাকতেন। কোরবানির ঈদে সপরিবারে বাড়িতে আসেন। আমার ভাই জামালও কুমিল্লা শহরে থেকে গাড়ি চালাত। জসিমের হোটেল বয় সাইমুনের বাড়ি করপাতি গ্রামে। ঈদের ছুটি শেষে সবাই মিলে সিএনজি আটোরিকশাযোগে কুমিল্লা যাচ্ছিল। এ দুর্ঘটনায় শিশু রিফাত ছাড়া জসিমের পরিবারের কেউই আর বেঁচে থাকল না। তার হোটেলটি দেখারও এখন কেউ নেই।’
এদিকে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ও দমকল বাহিনী মরদেহ ও গাড়িগুলো উদ্ধার করেছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন কুমিল্লা পুলিশ সুপার সৈয়দ নুুরুল ইসলাম, কুমিল্লা দক্ষিণের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বর্তমানে পদোন্নতি পেয়ে এসপি) আবদুল্লাহ আল মামুনসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুুল্লাহ আল মামুন জানান, তিসা পরিবহনের একটি বাস ঢাকা থেকে লাকসামে যাওয়ার পথে বাগমারা এলাকায় সিএনজি অটোরিকশার সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। তখন আবার একটি মাইক্রোবাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পেছন থেকে অটোরিকশাকে ধাক্কা দিলে ত্রিমুখী সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই পাঁচজন নিহত হয়। পরে আহতদের উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে বাকিদের মৃত্যু হয়। নিহতরা সবাই অটোরিকশায় ছিল। পরিবারের একমাত্র বেঁচে যাওয়া আট বছরের রিফাতকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।